ভারতের কেরালায় নিপা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেওয়া গেলেও আরো প্রাণঘাতী রূপে সেটি দ্বিতীয়বার ছড়িয়ে পড়তে পারে আশাঙ্কায় স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সেখানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত মাসে রাজ্যের কোঝিকোদের জেলায় প্রথম নিপা ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরে ভাইরাসটি মালাপ্পুরাম জেলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। মারা যাওয়া সবাই এই দুই জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শাইলাজ বলেন, “যদিও আমরা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম দফা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী হয়তো আবারও ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব হবে। সেজন্য আমরা সব ধরণে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। দ্বিতীয়বার প্রদুর্ভাব হলে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়বে।”
এদিকে, শুক্রবারও নিপা ভাইরাসের লক্ষণ শরীরে নিয়ে আর ছয় জন কোঝিকোদে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানায় এনডিটিভি।
জ্বর এবং শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসা এখন পর্যন্ত ২০৩ জনের নিপা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যাদের ১৬ জনই মারা গেছেন। আরও একজন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহে ১৭ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া আটকাতে কেরালা সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জনগণকে ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কোঝিকোদে ও মালাপ্পুরাম জেলায় সব ধরণের সমাবেশ ও বৈঠক বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বালুসেরি হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও সেবিকাদের ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেরালা পাবলিক সার্ভেস কমিশন আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত সব ধরণের লিখিত ও অনলাইন পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোঝিকোদে জেলা আদালতের একজন অধ্যক্ষের মৃত্যুর পর ‘বার অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে কালেক্টরের কাছে সাময়িকভাবে সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার একটি সতর্কবার্তা জারি করে জনগণকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদিও সেখানে এখনও কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়নি বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিপা ভাইরাসে সংক্রমণের লক্ষণগুলো হল শ্বাসকষ্ট, মস্তিস্কে প্রদাহ, জ্বর, মাথাব্যথা, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, বিভ্রান্তভাব ও প্রলাপ বকা। আক্রান্ত রোগী সংক্রমণের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গভীর কোমায় চলে যেতে পারেন।
এ পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো টীকা আবিষ্কৃত হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা। আক্রান্ত রোগীদের ‘নিবিড় পরিচর্যা করাই’ একমাত্র চিকিৎসা বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ভাইরাসটি আক্রান্ত বাদুড়, শুকর বা অন্য কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসটি অত্যন্ত প্রাণঘাতী। আক্রান্তদের ৭০ শতাংশই মারা যান বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার কাম্পুং সুনগাই নিপা এলাকায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো এ ভাইরাস শনাক্ত হয়।
২০০৪ সালে বাংলাদেশেও ফলখেকো বাদুড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত খেজুরের রস খেয়ে অনেকে এ রোগটিতে আক্রান্ত হন।
নিপা সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।